শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ০২:২৬ পূর্বাহ্ন
চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে দি আল-ফালাহ্ মেডিকেল সেন্টার এন্ড হসপিটাল এর বিরুদ্ধে রক্ত পরীক্ষায় ভুয়া রিপোর্ট প্রদানের অভিযোগ উঠেছে। এতে ডেঙ্গু আক্রান্ত জিয়াউল হক নামে এক রোগির শারীরিক ও মানসিক অবস্থার ব্যাপক অবনতি ঘটে। দি আল-ফালাহ্ হসপিটাল কর্তৃক প্রদত্ত রক্ত পরীক্ষার (সিবিসি) রিপোর্টটি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় পরবর্তীতে ভুক্তভোগি অন্য একটি হাসপাতালে একই পরীক্ষা দ্বিতীয়বার করিয়ে চিকিৎসকের দারস্ত হলে বিষয়টি সকলের নজরে আসে। এ ঘটনায় আল-ফালাহ্ হসপিটাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের ভুল স্বীকার না করে উল্টো রোগির স্বজনদের সাথে অশোভন আচরণ করেন।
ভুক্তভোগির পরিবার সূত্রে জানা গেছে, কয়েকদিন যাবৎ প্রচন্ড জ¦রে ভুগছিলেন চৌদ্দগ্রাম বাজারের ফয়েজুন্নেছা মহিলা মাদরাসা রোডের ব্যবসায়ী মো: জিয়াউল হক। ডাক্তারি পরামর্শে ঔষধ সেবনের পরও জ¦র না কমায় পরিবারের লোকজন অসুস্থ জিয়াউল হককে গত বুধবার (১১ জুন) বিকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রোডে ডক্টরস চেম্বারে ডা. আফরোজা আরজু মৌসুমীকে দেখান। রোগির অবস্থা ভালো নয় দেখে চিকিৎসক তাকে রক্ত পরীক্ষা (সিবিসি) দিলে স্বজনরা তাকে দি আল-ফালাহ্ হসপিটাল নিয়ে যান এবং সেখানে রক্ত পরীক্ষা শেষে রিপোর্ট নিয়ে চিকিৎসকের নিকট আসলে চিকিৎসক রিপোর্টটি দেখে সন্দেহ পোষণ করেন। পরে একই পরীক্ষা চৌদ্দগ্রাম প্রাইম হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে করালে সেখানকার রিপোর্টে রোগির ডেঙ্গু সনাক্ত হয়। ডাক্তার সেটিকে গ্রহণ করেন এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থাপত্র লেখেন। দু’টি হসপিটালের একই পরীক্ষার রিপোর্টে আকাশ-পাতাল ব্যবধান হওয়ায় চিকিৎসক বিস্ময় প্রকাশ করেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগিকে সুস্থ দেখায় আল-ফালাহ্ হসপিটাল। বিষয়টি জানাজানি হলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, দি আল-ফালাহ্ মেডিকেল সেন্টার এন্ড হসপিটালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ল্যাব ইনচার্জ মো: হৃদয় গত কয়েকদিন যাবৎ ঈদুল আযহার ছুটিতে আছেন। তার অনুপস্থিতে ল্যাব সহকারী হসপিটালের সকল প্রকার রিপোর্ট প্রদান করেন বলে জানান আল-ফালাহ হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিপন। একইভাবে বুধবার অসুস্থ জিয়াউল হকের রিপোর্টটিও প্রদান করেন তিনি। রিপোর্টটি সন্দেহ হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে ভুক্তভোগির পরিবার অন্যত্র একই পরীক্ষা করালে আল-ফালাহ্ হসপিটালের রিপোর্টটি ভুয়া প্রমাণিত হয়। এদিকে ভুয়া রিপোর্টের ফলে রোগির স্বজনরা বিপাকে পড়ে যায় এবং সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যহত হয়। বিষয়টি আল-ফালাহ্ হসপিটাল কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা রোগির স্বজনদের সাথে অশোভন আচরণ করেন এবং প্রদানকৃত রিপোর্টটি ছিনিয়ে নেয়। বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে ল্যাব সহকারী গুরুত্বপূর্ণ রক্ত পরীক্ষাসহ বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্ট প্রদান করায় হসপিটালটির অনুমোদন ও আদৌ ল্যাব ইনচার্জ আছে কিনা এ নিয়ে জনমনে নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এখন। আল-ফালাহ্ হসপিটালের দায়িত্বহীন আচরণে সাধারণ রোগিরা হতাশা প্রকাশ করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার দুপুরে দি আল-ফালাহ্ মেডিকেল সেন্টার এন্ড হসপিটালে গেলে প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মো: সরোয়ার হোসেন ভূূঁইয়া লাভলুকে পাওয়া যায়নি। পরে হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো: রিপনুল হক রিপন বলেন, আমাদের মেশিনটিতে টেকনিকেল ত্রæটি দেখা দেওয়ায় রিপোর্টে ভুল এসেছে। ইতিমধ্যে মেশিনটি মেরামতের জন্য পাঠানো হয়েছে।
মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ল্যাব ইনচার্জের অনুপস্থিতিতে ল্যাব সহকারী কিভাবে রিপোর্টে স্বাক্ষর করে? এমন প্রশ্নে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
এ ব্যাপারে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো: রশিদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ল্যাব ইনচার্জের অনুপস্থিতিতে ল্যাব সহকারী কোনোভাবেই পরীক্ষার রিপোর্টে স্বাক্ষর করতে পারেন না। এটি অপরাধ। ভুক্তভোগির পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে রিপোর্ট জালিয়াতির বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।