রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন
তিতাস (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:
কুমিল্লার তিতাস উপজেলায় ঈদের জামাতের সময় আওয়ামীলীগ নেতাকে বক্তব্য দিতে বাধা দেওয়ার জের ধরে দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি, বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার বিকেলে উপজেলার মজিদপুর ইউনিয়নের শাহপুর গ্রামে আ’লীগের মনোনীত সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার গ্রুপ এবং তার ভগ্নিপতি একই গ্রামের ইটালি প্রবাসী আলী হায়দার কুট্টি ও একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক মিয়া সরকার গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দু’গ্রুপের একাধিকবার সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ ৮জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গুলিবিদ্ধদের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে এবং আহতদের তিতাস উপজেলাসহ বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
আহতরা হলেন, রিপন সরকার(৫৬), সাদ্দাম হোসেন(২৫), রবিউল হোসেন(২৮), ফারুক(২৪), হৃদয় হোসেন(২১), সায়েম(২৫), মান্নান(৩৩) ও সুন্দর আলি (৪২)।
সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম চেয়ারম্যান ও সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক মিয়া সরকারদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এর মধ্যে ঈদের দিন আ’লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম সরকার তার মহল্লার ঈদগাহ ছেড়ে শাহপুর পশ্চিম পাড়ার মহল্লার ঈদগাহে এসে নিজের আধিপত্য ধরে রাখতে রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে চায়। এসময় উপস্থিত সকল মুসল্লীদের অনুরোধে তারই ভগ্নিপতি ইটালী প্রবাসী আলী হায়দার কুট্টি তাকে বক্তব্য দিতে না দেওয়ায় এতে জাহাঙ্গীর আলম ক্ষিপ্ত হয়ে ঈদের পর দিন বিকেলে প্রবাসী আলী হায়দারের ওপর তার লালিত পালিত সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দেয় এবং কয়েকটি বাড়ি ও দোকানে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট করে। তারই জেরে সোমবার দুপুরে উভয় পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জরিয়ে পরে এসয় আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম সরকারের বড় ভাই রিপনসহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে এবং দু’পক্ষের ৮জন আহত হয়। পরে তিতাস থানা পুলিশ ফোর্স ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এঘটনায় স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে আতংক বিরাজমান। যেকোন মুহুর্তে আবারো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা রয়েছে বলেও জানা যায়।
এদিকে ইটালি প্রবাসী আলী হায়দার কুট্টি বলেন, বিগত পনেরো বছর ধরে সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীর ও তার বড় ভাই রিপন বাহিনীর অত্যাচারে শাহপুর গ্রামের দক্ষিণ সমাজের মানুষ অতিষ্ঠ। এমন কোনো কাজ নেই জাহাঙ্গীর ও তার ভাই রিপন করে নাই। স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পরও আমাদের সমাজে এসে জোর জুলুম, চাঁদাবাজি এবং আধিপত্য বিস্তার অব্যাহত রেখেছে সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীর-রিপন বাহিনী। তিনি আরও বলেন, মহল্লাবাসীর আপত্তি ছিল এই জাহাঙ্গীর ও রিপনের অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপিড়ন থেকে আমাদেরকে রক্ষা করেন, তাই আমি ঈদের জামাতের সময় আ’লীগের সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীরকে বক্তব্য দিতে বাধা প্রদান করি, এর জের ধরেই আমাকে মারার জন্য তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী আমার ওপর লেলিয়ে দেয়, বাড়িতে আমাকে না পেয়ে আমার ভাই হাশেম ভূঁইয়ার বাড়িতে গিয়ে হামলা চালায় এবং বাড়িঘর লুটপাট করে আমার পরিবারের সদস্যদের মারধর করে হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়। এই সহোদর সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।
অপর দিকে আ’লীগ নেতা জাহাঙ্গীর চেয়ারম্যান বলেন, ফারুক চেয়ারম্যান ও তার ছেলে ফারাবি নিজে অস্ত্র নিয়ে আমার বাড়িতে হামলা করে এবং আমার ভাইয়ের ওপর গুলি করে। তাদের গুলিতে আমার ভাই রিপন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আমি প্রশাসনের কাছে তাদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।
ঘটনার বিষয়ে ফারুক চেয়ারম্যান বলেন, জাহাঙ্গীর চেয়ারম্যান প্রথমেই আমার লোকজনের ওপর হামলা চালায় এবং বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করেন। তাদের হামলায় আমার ৪-৫জন লোক আহত হয়েছে। এদিকে আমার লোক হাশেম ভূইয়া’র বাড়িতে হামলা এবং লুটপাটের ঘটনায় মামলা নিতে থানায় গড়িমসি দেখাচ্ছে। উল্টো উদ্দেশ্যে প্রণোদিতভাবে মঙ্গলবার হাশেম ভূঁইয়া যেনো মামলা না করতে পারে সে জন্য বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের হামলার মামলায় তার নাম না থাকলেও তাকে অজ্ঞাত আসামীতে যুক্ত দেখিয়ে আটক করেছে পুলিশ।
এবিষয়ে তিতাস থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদ উল্যাহ বলেন, সাহাপুর গ্রামে ঈদের নামাজের সময় আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর চেয়ারম্যানকে বক্তব্য দিতে না দেওয়ায় তারই ভগ্নিপতি ইটালি প্রবাসী আলী হায়দার কুট্টির সাথে মারামারি হয়েছে এরই ফাকে একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক মিয়া সরকার কুট্রির সাথে যোগ হয়ে আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীরের ওপর হামলা করে এবং উভয় পক্ষ গোলাগুলিতে জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে তিতাস থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনা স্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। বর্তমানে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। তবে এখনও কোনো পক্ষ অভিযোগ দেয়নি, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।